বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
সাপ্তাহিক সাহসী সময়ের ২৬তম বর্ষে পদার্পনে সকলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি রাজবাড়ীতে হারানো ৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি কালুখালী উপজেলার হোগলাডাঙ্গী মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তরে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার পথে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলায় ভ্যান উল্টে গভীর গর্তে পড়ে মসলা বিক্রেতা নিহত রাজবাড়ীতে সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ডিজিটাল যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের উদীয়মান ক্ষেত্র ঃ ভার্মা
জনসেবা ও সমাজকল্যাণে সরকারের ১১বছরের বৈপ্লবিক কর্মকান্ড

জনসেবা ও সমাজকল্যাণে সরকারের ১১বছরের বৈপ্লবিক কর্মকান্ড

 শাহ আলম বাদশা  সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম জাতি গঠন ও কল্যাণমূলক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় দেশের দুস্থ, দরিদ্র, অবহেলিত, অনগ্রসর ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত ও সমস্যাগ্রস্ত জনগেষ্ঠিীকে নিরলসভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। লক্ষ্যভুক্ত সকল জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত সামাজিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এ প্রবন্ধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ১১ বছরের সাফল্য ও তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপন করা হলো।
বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল-২০১৫ প্রণয়ন করে। ভবঘুরে ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৪৩ সালে বৃটিশ সরকার প্রণীত বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন-১৯৪৩ বাতিল করে ২০১১ সালে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন-২০১১ প্রণয়ন করা হয় এবং ২০১৫ সালে এ আইনের আওতায় ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) বিধি-২০১৫ প্রণীত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার প্রণীত শিশু আইন-১৯৭৪ যুগোযোগী করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের আলোকে একে সংস্কার করে শিশু আইন-২০১৩ এবং ২০১৮ সালে আবার একে সংশোধন করে শিশু আইন-২০১৮ নামে রূপান্তরিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১ প্রণয়ন করে এবং ২০১৩ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদের আলোকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রবর্তন করে। পাশাপাশি এ আইনের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধি-২০১৫ প্রণীত হয়েছে।
এছাড়াও নতুন আঙ্গিকে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ এবং এর বিধি-২০১৫ প্রণয়নের পাশাপাশি ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে। অধিকন্তু মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮ এবং বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ ও জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হয়েছে। এমনকি প্রবীণ ব্যক্তিদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবেও স্বীকৃতি দান করা হয়েছে।
২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট ছিল ১০১৩ কোটি ৩১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। অথচ ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাজেট ৬৮৮১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা শতকরা ৬৭৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ২০ লক্ষ প্রবীণ ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিলে ৬০০ কোটি টাকা, যা জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৪৪ লক্ষ প্রবীণ ব্যক্তির জন্য বার্ষিক বাজেট উন্নীত হয়েছে ২৬৪০ কোটি টাকায়। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক বাজেট ৪৪০% এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২০০% এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ৯ লক্ষ বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৭০ কোটি টাকা। তা মাথা পিছু মাসিক ৫০০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৭ লক্ষ জনের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১০২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮৮%, বাজেট বৃদ্ধি ৩৭৭ গুণ এবং জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০%।
২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে প্রতিবন্ধী ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে দুই লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু মাথা পিছু ভাতা মাসিক ৭৫০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫.৪৫ লক্ষ জনের জন্য বাজেট উন্নীত হয়েছে ১৩৯০.৫০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ভাতাভোগী ৭৭২% ও বাজেট ২৩১৭% বেড়েছে। এছাড়া জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০%।
২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষা-উপবৃত্তি খাতে ১৩ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ১লক্ষ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ৯৫ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। ফলে বাজেট বৃদ্ধি ১৫৯৪% এবং ভাতাভোগী বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৬৯%। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে ভাতাভোগীদের পাশ বই’র মাধ্যমে দেয়া হতো বলে অনেক ভাতা গ্রহীতা প্রাপ্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হতো। তাই ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে সকল ভাতা ভাতাভোগীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদানের নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে ভাতাভোগীদের প্রাপ্য হিস্যা নিশ্চিত হয়েছে। আবার ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে এ২চ (এড়াবৎহসবহঃ ঃড় চবৎংড়হ) পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হবে।
দেশব্যাপী ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে অটিজম রিসোর্স সেন্টার চালু রয়েছে, যা থেকে বছরে প্রায় ৪ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরাসরি সেবা পাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগীদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরী করা হয়েছে, যাতে ৫৮ লক্ষ ভাতাভোগীর তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। এ ডাটাবেজ ব্যবহার করে এ২চ (এড়াবৎহসবহঃ ঃড় চবৎংড়হ) পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ ও ডাটাবেজ তৈরী সম্পন্ন হয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। চা শ্রমিকদের জন্য সরকারী কোন সহায়তা ছিলো না। তাদের জীবনমান উন্নয়নে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। চলতি বছর ৫০ হাজার চা শ্রমিককে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগী, প্যারালাইজড ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারী কোন সহায়তা ছিল না। বর্তমানে এ সকল রোগীদের সহায়তার জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা হারে ৩০ হাজার রোগীকে সুচিকিৎসার জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, যেমন- হিজড়া, বেদে এদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রশিক্ষণ, বিশেষ ভাতা এবং শিশুরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে ৫৭৬৭ জন হিজড়া, ১০০০০ বেদে ও ৭১,৩২০ জন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এ সহায়তা লাভ করবে। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা।
পথ শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে ১৩টি শেখ রাসেল প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২৬টি আবাসিক কেন্দ্রে প্রায় ১৩০০ বালক ও ১৩০০ বালিকাকে সুরক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম ছিল না। গ্রামীণ এসব দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৪১৯টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বিনামূল্যে স্থাপনের মাধ্যমে মেধাবী গরীব শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শোনা ও কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং ৩২টি মোবাইল থেরাপী ভ্যানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, শারিরীক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদেয় সকল সেবা সহজভাবে নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী উন্নত জীবন নিশ্চিতকরণ ও মানুষের জন্য যত্নশীল সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় -পিআইডি ফিচার।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved  2022 sahasisamoy
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!